খৃষ্ঠীয় চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত খালিয়াজুরী অঞ্চল ছিল কামরূপ রাজ্যের রাজধানী। চতুর্দশ শতাব্দীতেই জিতারী নামক এক ক্ষত্রিয় সন্ন্যাসী কর্তৃক কামরূপের তৎকালীন রাজধানী ভাটী রাজ্য নামে খ্যাত (বর্তমান খালিয়াজুরীসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চল) অঞ্চল আক্রান্ত ও অধিকৃত হয়। তৎসময় বর্তমানের খালিয়াজুরী অঞ্চল ভাটী বলে চিহ্নিত করা হত।
খালিয়াজুরী পরগণার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে গবেষকগণ মনে করেন কতিপয় শতাব্দী পূর্বে লম্বোদর নামক একজন ক্ষত্রিয় সন্ন্যাসী এতৎপ্রদেশে আগমণ করেন ও ভাটীর শাসনভার গ্রহণ করেন। কোদরনাথ মজুমদার প্রণীত ময়মনসিংহের ইতিহাস গ্রন্থে তিনি উলেখ করেন। (পৃ-১৫) ভাটির শাসনকর্তা ছিল জিতারী নামক জনৈক সন্ন্যাসী। নগেন্দ্র নাথ বসুর বিশ্বকোষ দৃষ্টে তিনিও জিতারীর রাজত্বকাল অনুমান করেন দ্বাদশ শতাব্দীর ভিতর যদি লম্বোদর ও জিতারী দুব্যক্তি হয় তাহলে তৎসম্বন্ধে কোন আত্তির কারণ নেই। আর যদি একই ব্যক্তি হয় তবে লম্বোদর শাসনকাল দ্বাদশ শতাব্দীতে কখনই হতে পারে না। তবে পূর্ব-ময়মনসিংহের এই সকল সামস্ত রাজ্যগুলো যে পরবর্তী বার ভূই^য়াদের নহে তাহা প্রমাণ করতে চাহেন ময়মনসিংহের ইতিহাস গ্রন্থের প্রণেত।তিনি উলেখ করেন যে, সম্ভবত কোচ, ম্যাচ, গারো, হাজং প্রভৃতি জাতিই এই স্বতন্ত্র রাজ্যগুলোর অধীশ্বর ছিল। কিন্তু তিনি খ্রষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বার ভূইঁয়াগণ কর্তৃক কামরুজরাজ্যের বিভক্তিকরণের কথাও উলেখ করেছেন। কুমার ভাস্বর বর্মণ যখন সম সামন্ত রাজাগণের অধীশ্বর, পূর্ব-মযমনসিংহ তখন কয়েকটি স্বতন্ত্র রাজ্যে পরিণত হয়। তন্মধ্যে নেত্রকোণার খালিয়াজুরী, মদনপুর ও সুসং প্রভৃতি রাজ্যগুলো ১২৫৮ খৃষ্টাব্দে ইক্তার উদ্দিন উজবেগ তুগ্রল কাঁন আক্রমণে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে ভেঙ্গে গেলেও পরবর্তী সময় ক্ষুদ্র দৃপতিদের আক্রমণে তুগ্রল খাঁ নিহত হরে রাজ্যগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। খালিয়াজুরী নামকরণ যে ভাটী নামকরণের পরবর্তী সময়ে হয়েছে এবং সামন্ত রাজাদের শাসনামলে তা অনেকেই অনুমান করেন। ঐ খালিয়াজুরী নামকরণের উৎপত্তির সন্ধ্যান করতে কিংবদন্তীর উপর নির্ভর করতে হয়। এক জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলে খাসিয়াদের অবস্থান ছিল বিধায় স্থানের নামকরণ হয় খাসিয়াজুরী। কালক্রমে শব্দটি রূপান্তর হতে হতে খালিয়াজুরীতে রূপ নিয়েছে। অনেকই এ জনশ্রুতিটির উপর আলোচনা করতে যেয়ে বলেন যে, গারো, হাজং, খালিয়াজুরী নামকরণ যে ভাটী নামকরণের পরবর্তী সময়ে হয়েছে এবং সামন্ত রাজাদের শাসনামলে তা অনেকেই অনুমান করেন। ঐ খালিয়াজুরী নামকরণের উৎপত্তির সন্ধ্যান করতে কিংবদন্তীর উপর নির্ভর করতে হয়।
এক জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলে খাসিয়াদের অবস্থান ছিল বিধায় স্থানের নামকরণ হয় খাসিয়াজুরী। কালক্রমে শব্দটি রূপান্তর হতে হতে খালিয়াজুরীতে রূপ নিয়েছে। অনেকই এ জনশ্রুতিটির উপর আলোচনা করতে যেয়ে বলেন যে, গারো, হাজং, কোচ প্রভৃতি উপজাতির হাত থেকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কাসিয় উপজাতিরা এ অঞ্চলটি জোর দখল করে নেয়। এই জোরাজুরিতে অঞ্চলটি খাসিয়াদের হস্তগত হয়। ঐ কারণে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অধিবাসীগণ সেই অঞ্চলকে খাসিয়াজুরী বলে আখ্যায়িত করে। খালিজুরীর অপর অর্থ র পর জলধারা স্থানীয়ভাবে যাকে জুরি অভিহিত করা হয়ে থাকে। এ কারণেই কি স্থানের নাম খালিজুরী? সে শব্দ কালে খালিয়াজুরী হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বার ভূইঁয়াদের অন্যতম নায়ক ঈশা খাঁ এই ভাটী অঞ্চল শাসন করে ভাটীরাজ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশাল এই ভাটী অঞ্চল নিয়ে ঈশা খাঁর রাজ্য প্রকিষ্ঠা হয়েছিল সম্রাট আকবরের প্রেরিত সময় কৌশলীগণ এই ভাটী অঞ্চলের শাসকদের প্রতিহত করার জন্য বেশ কটি যুদ্ধভিযান প্রেরণ করে।
এই ভাটী অঞ্চল বলে খ্যাত পরগণা সমূহ দু’ভাগে বিভক্ত যেমনঃ খালিয়াজুরী ও জঈনশাহী। ঈশা খাঁর মৃত্যুর (১৫৯৯) পর তার দ্বাদশ রিষদের মধ্যে যে সকল মজলিসগণ ছিলেন, খালিয়াজুরী সেই মজলিশ বংশীয়দের হস্তগত হয়। ১৭৭২ খৃষ্টাব্দে মুর্শিদকুলী খাঁর সময় বাংলার ভূমি ৩য় বার বন্তোবস্ত হয়। এই বন্দোবস্তে বাংলাদেশ ১৩ চাকলা, ৩৪ সরকার ও ১৬৭০ মহালে বিভক্ত হয়। ঔ চাকলায় খালিয়াজুরী, সুসং, ত্রিপুরা, মুচা প্রভৃতি ৪ জন অন্তনুপতির জন্য ৪৯৭৫০ টাকা রাজস্বে ২ পরগণার জায়গীর নির্দিষ্ট ছিল। সে সময় থেকেই জমিদার শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর মৃত্যুর পর নবাব সুজা উদ্দীনের সময় ১৭২৮ খৃষ্টাব্দে (১১৩৫ বাং) ঢাকা নয়াবতের যে ওয়াসিল জমা ছিল সেখানে খালিয়াজুরীর ২২৬১ টাকা রাজস্বের কথা উলেখ পাওয়া যায়।
হাওড় অঞ্চল বল খ্যাত খালিয়াজুরীর পূর্ব অবস্থানে মানব বসতি অযৌক্তিক বলে অনেকই মনে করেন। এ সকল প্রশ্নের উত্তরে প্রমাণ দিয়ে বলা যায়, ১৯৬২ সালে খালিয়াজুরীর বিভিন্ন গ্রামের স্থানে স্থানে কালো রং-এর কয়লা জাতীয় পদার্থ পাওয়া যায়, ১৯৬২ সালে খালিয়াজুরীর বিভিন্ন গ্রামের স্থানে স্থানে কালো রং-এর কয়লা জাতীয় পদার্থ পাওয়া যায়, স্থানীয় ভাবে যা কছম নামে পরিচিত। সুতরাং বুঝা যায়, এ সকল অঞ্চলে পূর্বে জনবসতি ও বৃক্ষাদির অস্তিত্ব ছিল। কালে মাটি চাপা পড়ায় বা কয়লা জাতীয় পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে।
ভাটি অঞ্চলের জলদস্যুদেদ প্রভাব ছিল প্রকট। এছাড়া স্থানীয়ভাবে জানা যায় খালিয়াজুরী গ্রামে দীঘলহাটীতে নির্মিত যে এক সুউচ্চ ইমারত প্রদর্শিত আছে। পূর্বে তার চূড়ায় বসে জলদস্যুদের নৌযোগে চলাচলের গতিবিধি দেখা ও প্রয়োজনে সর্ব সাধারণকে সর্তীকরণ করা হত। এমনকি এখন পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে খালিয়াজুরী বাজার এলাকাকে ডাকাত খালিয়াজুরী বলে অবহিত করা হয়। ক্রমে বৃটিশ সময়কালে অর্থ্যাৎ ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে শান্তি-শৃঙ্খলা ও শাসন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খালিয়াজুরীতে কেন্দুয়ায় আওতাভূক্ত এক পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়।
মযমনসিংহের বিবরণ গ্রন্থে দেখা যায় ১৯০৬ সালের ১৬ ই জুন পূর্ববঙ্গ ও আসাদ গেজেটিয়ারের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ময়মনসিংহ জেলার যে ১১টি আউটপোষ্ট থানা স্থাপিত হয়েছিল (No.6676, Dated: 15.06.06), তন্মধ্যে বর্তমান নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা ও খালিয়াজুরীর কথা উলেখ রয়েছে। G.O 1682নং স্মারক মূলে ২৬ শে মে ১৯১০ কেন্দুয়ার ফাঁড়ি থানা খালিয়াজুরী বারহাট্টা সার্কেলের ফাঁড়ি হিসাবে নেয়া হয়। List of Polices-stations in the provinve of east bengal (Corrected up to 1st April 1950). পুস্তকের ১২ নং পৃষ্ঠায় উলেখ রয়েছে-Khaliajuri Police Station Notification No. 418 PJ, Dated 26th January 1918.
১৯৮৩ সালে খালিয়াজুরীকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে এই থানার কাজ শুরু হলেও ১৯৯০* সালে গাজীপুর ইউনিয়নটি কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থাকার আওতায় হস্তান্তর করা হয়। ২০০৪ সালের শেষদিকে গাজীপুর ইউনিয়নটি আবার খালিয়াজুরী উপজেলায় অর্ন্তভূক্ত হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS